নিজস্ব প্রতিনিধি।।
গোপালগঞ্জ: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় নিরাপরাধ মানুষকে গন গ্রেপ্তার বন্ধে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর খোলাচিঠি দিয়েছেন অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে চান।
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ১২টায় হাবিব তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে আইডিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস বরাবর এ খোলাচিঠি পোস্ট করেন।
গোপালগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে উল্লেখ করে খোলাচিঠিতে তিনি লিখেছেন, গোপালগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি অংশ। গোপালগঞ্জ জেলার সর্বসাধারণ মানুষ স্বাধীন সার্বভৌমত্বের দেশ আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের নাগরিক। ১৯৫২, ৫৪, ৫৮, ৬৬, ৭৯, ৭০ এর শোষণ নির্যাতন আর বঞ্চনা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী থেকে নিজেদেরকে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। এই জাতীয় নেতার জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম জেলা আমাদের এই গোপালগঞ্জ। এছাড়া উনবিংশ শতাব্দীর ইসলামি রেনেসাঁ এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বিন মোজাহেদে আজম আল্লামা শামচুল হক ছদর সাহেব হুজুর (রঃ) এর জন্ম আমাদের এই গোপালগঞ্জ।
অ্যাড. হাবিব লিখেছেন, বাংলাদেশ একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে বহু দল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। একটি গণতান্ত্রিক দল তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে এটা তার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। এ অধিকার ক্ষুন্ন করার ক্ষমতা রাষ্ট্র কাউকে দেয় নাই। গোপালগঞ্জে এনসিপির পথসভা কে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে নিঃসন্দেহে বলা যায় একটি অপরাধ। আর এ অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়া প্রতিটি স্বাধীনতা কামি মানুষের কাম্য। গোপালগঞ্জ জেলার সর্বসাধারণ এই ঘটনার সহিত জড়িত প্রকৃত অপরাধীর বিচার প্রত্যাশা করে।
কিন্তু আমরা খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় গোপালগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় থেকে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ অনেক নিরপরাধ সাধারন মানুষকে গন গ্রেপ্তার করিতেছে যাহা খুবই উদ্বেগ ও আতঙ্কের বিষয়। প্রত্যেকটি অপরাধের সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীর বিচার গোপালগঞ্জ জেলার সর্বসাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কারোই কাম্য নয়। গোপালগঞ্জ জেলার সর্বসাধারণকে গণ গ্রেপ্তার করা হচ্ছে যাহা সত্যিই অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতনের শামিল।
তিনি আরও লিখেছেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় গোপালগঞ্জ জেলার নিরপরাধ সর্বসাধারণ মানুষ বর্তমান সময়ে গণ গ্রেপ্তারে আতঙ্কিত হয়ে অতি মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমতাবস্থায় আপনার সমীপে আরজী এনসিপির পথসভা কে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তাহা নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হোক। একইসাথে নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে গণ গ্রেপ্তারের আতঙ্ক থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিনয়ের সহিত অনুরোধ করছি।
পোস্টের বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট হাবিব বলেন, গোপালগঞ্জের সব সাধারণ মানুষ তো এই সহিংসতায় জড়িত নয়। বর্তমানে কারফিউ আর গন গ্রেপ্তারে প্রতিটি মানুষ আতঙ্কিত। তাই সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর খোলাচিঠি পোস্ট করেছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমানের মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি। আর টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম ২৭ জনের আটকের তথ্য দিয়ে কলটি কেটে।