সাভার (আশুলিয়া), ঢাকা:
আদালতের নিষেধাজ্ঞা, একাধিক সাধারণ ডায়েরি এবং পুলিশি নির্দেশনা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে তানজিলা টেক্সটাইল লিমিটেডের বিরুদ্ধে। আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় বাংজিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের মালিকানাধীন জমিতে ৬ জুলাই জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর ভেঙে দখল, বালুভরাট এবং পাইলিংয়ের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মো. আজাদের নেতৃত্বাধীন একটি দল।
বাংজিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যথাক্রমে দলিল নং ৮৫৬৯ ও ১৪৫০৯-এর মাধ্যমে ২৫.৭৫ শতাংশ জমি বৈধভাবে ক্রয় করে, যা রেকর্ডভুক্ত, নামজারি ও খাজনাপ্রদানকৃত। তবে তানজিলা টেক্সটাইল দীর্ঘদিন ধরে জমিটি দখলের চেষ্টা ও সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রজেক্ট ম্যানেজার রেজাউল করিম রাজু।
তিনি বলেন, “তানজিলা টেক্সটাইল আসলে একটি সুসংগঠিত ভূমিদস্যু চক্র। আমাদের প্রহরীকে মারধর, সাইনবোর্ড ভাঙচুর এবং কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি—সবই করেছে আজাদের নেতৃত্বাধীন বাহিনী।”
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের শুরুতে কোনো অনুমতি ছাড়াই ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইন বাংজিনের জমির উপর দিয়ে স্থাপন করে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জেনারেল ম্যানেজার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ মেলেনি।
এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং: ১৩৪১ ও ১৮০৪) করা হয় এবং ১০ জুলাই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পারভেজ চৌধুরীর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় মামলা (নং: ১৯৬/২৫) দায়ের হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তানজিলা টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান শিমুল, জিএম মো. আজাদ, ম্যানেজার হাফিজুর রহমান, স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল আলম রবি, সমরাজ আল মামুন এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জিএম মো. আক্তারুজ্জামান লস্কর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, “তানজিলা টেক্সটাইল এভাবে একাধিক জমি দখল করেছে। এখন তারা ‘ভূমিদস্যু কোম্পানি’ হিসেবে পরিচিত।”
৩০ জুন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ ও ট্রাফিক) আরাফাতুল ইসলামের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষকে নোটিশ দেওয়া হলেও তানজিলা টেক্সটাইল আদালতে হাজির হয়নি।
আশুলিয়া থানার এসআই মো. সাইফুল্লাহ আকন্দ বলেন, “আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর ১০ জুলাই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং সকল কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশ দিই। তবে তারা তা মানেনি, যা আদালত অবমাননার শামিল।”
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জিএম আক্তারুজ্জামান লস্কর বলেন, “জমির ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগে কারো আপত্তি থাকলে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাংজিন কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের প্রতি দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
তানজিলা টেক্সটাইলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়া থানার ওসি জানান, “আমরা আদালতে প্রতিবেদন দিচ্ছি যে তারা আদেশ মানছে না। দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আশুলিয়া