টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্নি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমির আলীর ছেলে শাহিন শেখ (২৩) স্ত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় ৬ মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
শাহিনের মা খুসিয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে ও পাটগাতি গ্রামের শপন মুন্সীর মেয়ে মীমের মধ্যে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। মীমকে তার মা-বাবার কাছে ফেরত পাঠানোর অনেক চেষ্টা করলেও সে যেতে রাজি হয়নি। পরে পুলিশ এসে মীমকে নিয়ে যায়।
তবে ৩ দিন পর মীম পুনরায় শাহিনের বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে আদালত থেকে তাদের বিবাহ রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করা হয়। প্রায় তিন মাস সংসার করার পর হঠাৎ মীমের মা নিপা বেগম মেয়েকে নিয়ে যান এবং কয়েক দিন পর গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শাহিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
খুসিয়ারা বেগম বলেন, “মামলায় শাহিনকে জেল দেয়া হয় এবং টানা ৬ মাস জামিন না পেয়ে জেলে কাটাতে হয়। পরে আমি মীমের মা-বাবার সঙ্গে মামলা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। দর কষাকষির পর ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকায় মামলা তুলে নেওয়ার কথা হয়। আমি ওই টাকা আইনজীবী হাবিবুর রহমানের হাতে তুলে দিই, কিন্তু মামলা তোলা হয়নি।”
২০ দিন পর জামিনে মুক্ত হয়ে শাহিন বাড়ি ফিরে আসে। এর কিছুদিন পর মীম তাকে ফোন করে জানায়, “আমার মা তোমার সঙ্গে আমাকে থাকতে দেবে না, অন্য জায়গায় আমার বিয়ে ঠিক করেছে।” এই কথা শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া শাহিন আত্মহত্যা করে।
মৃত্যুর আগে একটি সাদা কাগজে লিখে যায়:
“আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী মীম ও তার মা নিপা বেগম। তাদের জন্য আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম।”
খুসিয়ারা বেগম বলেন, “আমি গরিব মানুষ, কারও কাছে বিচার পাইনি। ছেলের মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় মীমের আবার বিয়ে দেয় তার মা। যদি মীম অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়, তবে কীভাবে এত দ্রুত আবার বিয়ে হয়? জাতির কাছে আমার প্রশ্ন রইলো।”
তিনি আরও বলেন, “১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা দিয়েও আমার ছেলের জীবন বাঁচাতে পারলাম না। আমি চাই, এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক এবং মীম ও তার মায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে আর কোনো মা তার সন্তানকে এভাবে হারাতে না হয়।