নিজস্ব প্রতিনিধি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মতাদর্শ পরিবর্তন বা দলে যোগ-বিয়োগ নতুন কিছু নয়। তবে কখনো কখনো কিছু ব্যক্তি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান এমনভাবে বদলান, যা সাধারণ মানুষের চোখে “সুযোগসন্ধানী পল্টি” হিসেবেই বিবেচিত হয়। সম্প্রতি কুশলী ইউনিয়নের আলোচিত নাম মোস্তফা কামাল (চাঁন মিয়া) সেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি পোস্টার ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেগুলোর মাধ্যমে চাঁন মিয়ার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে উঠেছে তুমুল বিতর্ক। একদিকে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগপ্রার্থী শেখ হাসিনার পক্ষে সরাসরি নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রচারণা চালান তিনি। “শেখ হাসিনা আপার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন” — এমন স্লোগানসহ পোস্টারে তাঁর ছবি সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা বোঝায় তিনি নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
অথচ মাত্র কয়েক মাস পর, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে তাঁর শুভেচ্ছা পোস্টারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের ছবি যুক্ত করে শুভেচ্ছা বার্তা প্রকাশ করেছেন। পোস্টারজুড়ে বিএনপির রঙ, বার্তা ও প্রতীকী উপস্থিতি এতটাই প্রবল যে, তা দেখে সাধারণ মানুষ বিস্মিত।
এমন অবস্থান পরিবর্তনের পেছনে সময়ের ব্যবধানও খুবই অল্প—যেখানে একজন নেতাকে এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে মাঠে দেখা গেছে, আর পরবর্তী মুহূর্তেই তিনি বিএনপির স্লোগানে সমর্থক রূপে আত্মপ্রকাশ করছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন শেষে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট বিদেশ গমন করলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এরপর থেকেই চাঁন মিয়ার রাজনৈতিক সুর বদলে যায়, এবং তাকে দেখা যায় বিএনপি-ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রোগ্রাম করতে।
বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে—এই পরিবর্তন কি সচেতন রাজনৈতিক কৌশল, নাকি নিছক সুবিধাবাদিতা? অনেকে সরাসরি বলছেন, এটি হচ্ছে রাজনৈতিক ‘পল্টিবাজি’ বা আদর্শহীন অবস্থান গ্রহণ, যা রাজনীতির প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিপূর্বে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের কোন নেতা-কর্মীর বিএনপিতে ঠাঁই হবে না।” তাহলে প্রশ্ন উঠে—আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পোস্টারে যিনি সরাসরি প্রচার করেছেন, তিনি কি সত্যিই বিএনপির আদর্শিক দলভুক্ত হতে পারেন?
সম্প্রতি মোস্তফা কামাল (চাঁন মিয়া) কে টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন বিএনপি-সমর্থিত প্রোগ্রামে দেখা যাচ্ছে, যা রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান ও উদ্দেশ্য নিয়ে আরও সন্দেহ সৃষ্টি করছে। একপক্ষ বলছে—এটি শুধুই তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষার কৌশল, অন্যপক্ষ একে বলছে চরম আদর্শহীনতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরণের আচরণ রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আদর্শহীন ও সুবিধাবাদী নেতৃত্ব জনগণের আস্থা হারায়, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।